ভ্যাপসা

 গুড ফ্রাইডের দিন সকালবেলা এই ১১টা নাগাদ হঠা‌ৎ করে চা তেষ্টা পেল। যদিও আমি চা  এর তেমন ভক্ত নই তবে তেষ্টা পেলে কিআর করা যাবে! কিন্তু বাড়িতে বললে  চা এর বদলঅন্য  কিছু জুটতে পারে অতএব চল রাস্তার  মোরে  চা এর দোকানে।  দোকানে গিয়ে ছেলেটিকে বললাম ভাই একটা চা দাও। ছেলেটি বলল একটু বসতে হবে দাদা  বানিয়ে দিচ্ছি। অগত্যা কি আর করি বসেবসে  একটু ঝিমুনি এসে গিয়েছিল। হঠাৎ হেঁড়ে গলার আওয়াজ শুনে তাকিয়ে দেখি গোলগাল চেহারার এক গুঁফো লোক পাশে বসে আছে।
আমার দিকে তাকিয়ে বললেন - কি ভাই কেমন আছো ?
বললাম - ভালো আছি কিন্তু আপনাকে তো ঠিক চিনলাম না।
- আমাকে চিন্তে পারছনা ! সে কি !
- না ঠিক মনে পড়ছে না।
- ছোটবেলায় আমার ছড়া বলে কত হাততালি পেলে আর আমাকেই ভুলে গেলে !
- ছড়া ? কি ছড়া বলুনতো ?
- " শুনেছ কি বলেগেল সীতানাথ বন্দো
     আকাশের গায় নাকি টকটক গন্ধ"
- হ্যাঁ হ্যাঁ মনেপড়েছে
- এই অধমই সেই সীতানাথ বন্দো।
- আপনিই সেই গন্ধ বিশারদ !
- আমি কি তোমার সাথে মশকরা করছি ?
- না না তা নয় , কিন্তু এতদিন পর হঠাতৎ আপনার উদয় ! কারণটা ঠিক বুঝলাম না।
- আমিতো আছি, সবসময় আছি। যেখানেই গন্ধ নিয়ে ধন্দো সেখানেই আমি আছি।
- তা এবার কিসের গন্ধ চর্চা করছেন ?
- গন্ধের কি আর শেষ আছে ভায়া !
   এখানে কেমন যেন একটা ভ্যাপসানি গন্ধ পাচ্ছি।
- ভ্যাপসানি গন্ধ!  কিসের বলুনতো ?
- কিসের আর, এই যে তোমাদের ভোট পূজোর
   জোটের গন্ধ। কেমন যেন ভ্যাপসানি।
- ঠিক বুঝলাম না । গন্ধ সম্বন্ধে অজ্ঞ তো ।
- এতে না বোঝার কি আছে ! আর সবই যে বুঝতে হবে এই মাথার দিব্যি কে দিয়েছে বাপু!      এইদেখনা গত ভোটে যেমন মাটির নোনতা গন্ধ ছিল। এবার কেমন যেন ভ্যাসানি গন্ধ।        অনেকটা অনেকদিন ঘর বন্ধ থাকলে যেমন গন্ধ ওঠে সেইরকম আর কি।  
- তা পেতে পারেন, অনেক দিন বাদে  ভোট পূজারীরা গর্ত  থেকে বেড়িয়েছেতো একটু ভ্যাপসানি
লাগবে।
- শুধু ভ্যাপসানি নয় এর সাথে মিশেল ও আছে।
- মিশেল?  মানে ওবামা !
- ধুর শালা এ মিশেল সে মিশেল নয়রে ক্ষ্যাপা, এ হল গন্ধ মিশ্রণ।
- কিরকম ? কিরকম ?
কোথাও কোথাও আঁশটে গন্ধ ও পাচ্ছি।
- আপনার কি আর কোন কাজ নেই ! শুধু গন্ধ শুঁকে  বেড়াচ্ছেন?
- এটাইতো আমার কাজ।
- গন্ধ ভাতা পান না কি ?
- ভাতার ভাত আমি খাই না সোনা।
- তবে ! এই গন্ধ নিয়েই কি কোন ক্যাচাল বাধাবার তালে আছেন না কি !
- আমি ক্যাচালের মধ্যে নেই ওটা নারদের কাজ। বেটা স্বর্গেও ক্যাচাল বাধায় আবার মর্তেও বাধাচ্ছে।
- দুই নারদ একই  ! বলেন কি !
- সেটাইতো বলছি। স্বর্গে সবাই ওকে চিনে নিয়েছে, এখন আর কেউ পাত্তা দেয় না। তাই এবার মর্তে এসেছে।
- আপনি ভুল করছেন, এ অন্য নারদ।
- আরে পাগল সবই এক, সবই মায়া।
- তা আপনি জানলেন কি করে  ?
- শুধু আমি কেন, চন্ডিদাসের খুড়োও জানে।
- চন্ডিদাসের খুড়ো  ! সে আবার এর মধ্যে এল কোথা থেকে ?
- এল কি রে ক্ষ্যাপা!  সে তো আছেই। খুড়োর সেই মেকানিক্যাল সিস্টেমের কথা মনে আছে ?
- হ্যা হ্যা আছে বৈকি, সে তো যুগান্তকারি আবিষ্কার।
- সেই সিস্টেমটাই একটু আপডেট করে নারদকে সাপ্লাই করেছে। আর ব্যস, সবকটা মেছো বিড়াল সামনে এসে হাজির।
- আপডেটেড সিস্টেম ! সেটা কিরকম ?
- আরে পাগল খুড়ো কলের ডগায় কড়কড়ে বান্ডিল বেঁধে কলটা ছায়াধরার পিঠে বেঁধে দিল।    নারদ ছায়াধরাকে নিয়ে শুধু গর্তের মুখে দাঁড় করিয়ে দিল ব্যাস  আর কি,  মেছো বিড়ালগুলো গন্ধে গন্ধে বাইরে এসে যেই না বান্ডিলে থাবা মেরেছে ওমনি ছায়াধরা মেছোর    ছায়া খপাত করে ধরে নিল।
- ছায়াধরা সাথে ঝুড়ি নিয়েই গিয়েছিল !
- আরে না না খুড়ো এখানেও সিস্টেম আপডেট করেছে। ঝুড়ির বদলে গোপন ক্যামেরা ছায়াধরার ঘুনসিতে বেঁধে দিয়েছে। ব্যাস ক্যাচাল শুরু
- তা শেষমেশ কি বুঝছেন?
- বুঝতে চেষ্টা করছি, মানে গন্ধ বিচার চলছে। কিন্তু বাপু তোমাদের এখানে যা পলিউশন, তাতে নাকের ফুটো বন্ধ হয়ে যাচ্ছে।
- তাহলে ভ্যাপসানি আর আঁশটে গন্ধর কি হবে ?
- এখনি কি করে বলি বল!  এখনো তো কিছু সময় বাকি আছে। তবে সকালবেলা রোদ উঠলে ওসব গন্ধ উবে যাবে।    সূর্য আছে এটাই যা ভরসা। 

মন্তব্যসমূহ

  1. চমৎকার। এই ভ্যাপসা গুমোট সময়ে এক ঝলক টাটকা হাওয়া আর বিদ্যুতের ঝিলিক। শানিত কলম চলুক।

    উত্তরমুছুন
  2. চমৎকার। এই ভ্যাপসা গুমোট সময়ে এক ঝলক টাটকা হাওয়া আর বিদ্যুতের ঝিলিক। শানিত কলম চলুক।

    উত্তরমুছুন
  3. আহা, বড় ভালো লেখা যে!! চরিত্তিরদুটোর কথোপকথনে বেশ মজা পেলাম, সকালের বৈঠকি ভাবটাতে জমে গেল!

    উত্তরমুছুন

একটি মন্তব্য পোস্ট করুন

এই ব্লগটি থেকে জনপ্রিয় পোস্টগুলি

ছোট্টবেলার ছড়া

আগমনী

দুঃখ বিলাস