ছোট্টবেলার ছড়া

ছোটবেলায় আমরা কিছু ছড়া বলতাম। সেই সব ছড়া নিয়ে কখনও কখনও বন্ধুদের রাগাতাম। ছড়ার খেলা খেলতাম।
দেখতে গেলে সেইসব ছড়ার কোন মানে ছিল না, অর্থহীন ছড়া, ইংরাজীতে যাকে  Nonsense Rhymes বলে।
আজকের সময়ে ছোটদের খেলার মানেটাই বদলে গেছে। সেইসব অর্থহীন ছড়া কেউ আর প্রায় বলেনা। হয়তো কালের
নিয়মে একদিন হারিয়ে যাবে এইসব ছড়াগুলি। তাই মনে হলো যদি এইগুলো আমি লিখে রাখি। জানি আমার মতো
অখ্যাত ব্লগারের লেখা কারোর হয়তো চোখে পরবেনা। তবুও স্বপ্ন দেখতে দোষ কী। হয়তো ভুলকরে কারোর চোখে
পরে গেল আর তার বাড়ির ছোট্ট বাচ্ছাটা আধোআধো গলায় বলে উঠলো .... আমপাতা জোড়া জোড়া বা এলাটিং বেলাটিং শৈল বা ওপেনটি বাইস্কোপ বা ............................. 

লাটিং বেলাটিং শৈল 
কিসের খবর রইল 
রাজামশাই একটি বালিকা চাইল
কোন সে বালিকা চাইল 
টগরকে (যেকোন নাম)চাইল 
নিয়ে যাও নিয়ে যাও বালিকাকে
***********

আঁটুল বাঁটুল শামলা শাঁটুল 
শামলা গেছে হাটে 
শামলাদের মেয়েগুলো 
পথে বসে কাঁদে 
আর কেঁদো না, আর কেঁদো না 
ছোলা ভাজা দেবো 
আবার যদি কাঁদো তুমি
তুলে আছাড় দেবো
*********

চিড়িয়াখানার উট,
করছিল খুটখুট, 
তাইনা দেখে মালিক তাকে, 
পরিয়ে দিল বুট 
উট ব্যাচারী শেষে,
মিষ্টী মিষ্টী হেসে, 
একেবারে দৌড় দিল 
মরুভূমির দেশে
*********
আদা পাদা কৌন পাদা 
রামাজীকা ঘোড়া পাদা 
ঢাঁই ঢুঁই ঢুশ 
বিল্লী (যে কোন নাম) পাদা ফুশ
**********
আপন বাপন
চৌকি চাপন
ওল ঢোল
মামার কোল
এই ছেলেটি
খাটিয়া চোর
*********

টান দিয়েছি টোন দিয়েছি 
টানের পরে টোনটা, 
সাপ এঁকেছি ব্যাঙ এঁকেছি
খোকন নেবে কোনটা
**********
ইকির মিকির চামচিকির
চামেকাটা মজুমদার
ধেয়ে এলো দামোদর
দামোদরের হাঁড়িকুড়ি
দোয়ারে বসে চালকুটি
চালকুটতে হলো বেলা
ভাত খাবে সে দুপুর বেলা
ভাতে পরলো মাছি
কোদাল দিয়ে চাঁচি
কোদাল হলো ভোঁতা
খা শিয়ালের মাথা
********
আয় আয় চাঁদমামা
টিক দিয়ে যা
চাঁদের কপালে চাঁদ
টিক দিয়ে যা
মাছ কাটলে মুড়ো দেব
ধন ভাঙলে কুঁড়ো দেব
কালো রু দুধ দেব
দুধ খাবার বাটি দেব
চাঁদের কপালে চাঁদ
টিক দিয়ে যা
*********
আগডুম বাগডুম ঘোড়াডুম সাজে
ঢাক ঝাঁজর মৃদং বাজে।।
বাজতে বাজতে চললো ঢুলী
ঢুলী গেল সে- কমলাফুলি।।
কমলাফুলির টিয়েটা
সুয্যি মামার বিয়েটা।।
আয় রঙ্গন হাটে যাই
পান সুপারী কিনে খাই।।
পানের ভেতর ফোঁপরা
মায়ে ঝিয়ে ঝগড়া
কচি কচি কুমড়োর ঝোল
ওরে খুকু গা তোল্
হলুদ বনে কলুদ ফুল
সইয়ের নামে টগর ফুল
*********
আকাশ জুড়ে মেঘ করেছে, 
সুয্যি গেলো পাটে
খুকু গেছে জল আনতে
পদ্ম দীঘির ঘাটে
পদ্ম দীঘির কালো জলে 
হরেক রকম ফুল,
হাঁটুর নীচে দুলছে খুকুর
গোছা ভরা চুল
বৃষ্টি হলে ভিজবে সোনা, 
চুল শুকানো ভার
জল আনতে খুকুমণি 
যায় না যেন আর
*******


ওপেনটি বাইস্কোপ
তে তে তেইশকোপ্ ,
চুলটানা বাবু আনা
সাহহেব বাবুর বৈঠকখানা
কাল বলেছে যেতে
পান দেবে খেতে,
পান হলো ছোটো
বুড়ী তুমি ওঠো


"
ওপেনটি বায়োস্কোপ,
নাইন-টেন টেস্কোপ
সুলতানা-বিবিআনা,
সাহেব বাবুর বৈঠক খানা
বৈঠক খানায় গিয়ে,
পান-সুপারি খেয়ে
পানের আগা মরিচ বাটা,
স্প্রিংয়ে উপর ছবি আঁকা
যার নাম রেণবালা,
তাকে দেব মুক্তার মালা


ওপেনটি বাইস্কোপ
নাইন টেইন টেইস্কোপ
সুলতানা বেবিয়ানা
সাহেব বাড়ির বৈঠক খানা
রাজবাড়ীতে গিয়েছি
পান সুপারী খেয়েছি,
পানের আগায় মরিচ বাটা
স্প্রিংয়ের উপর ছবি আঁকা
যার নাম রেনুবালা
গলায় দিলাম মুক্তার মালা

*********


খুকু নাচে কোন্খানে?
শতদলের  মাঝখানে
সেখানে খুকু কী করে?
চুল ঝাড়ে আর ফুল পাড়ে
ডুব দিয়ে দিয়ে মাছ ধরে
*********

ঘুমপাড়ানি মাসি পিসি
মোদের বাড়ি এসো
খাট নেই, পালঙ্গ নেই, 
খোকার চোখে বোসো
খোকার মা বাড়ি নেই,
শুয়ে ঘুম যেয়ো
মাচার নীচে দুধ আছে, 
টেনেটুনে খেয়ো
বাটা ভরে পান দেব, 
দুয়োরে বসে খেয়ো
খিড়কি দুয়োর কেটে দেব, 
ফুড়ুৎ ফুড়ুৎ যেয়ো
*********
আমপাতা জোড়া জোড়া
মারব চাবুক ছুটবে ঘোড়া
পাগলা ঘোড়া খেপেছে
বন্দুক ছুঁড়ে মেরেছে
অল রাইট ভেরি গুড
মেম খায় চা বিস্কুট 
*********
আইকম বাইকম
তাড়াতাড়ি
যদু মাষ্টার
শ্বশুর বাড়ি
শ্বশুর বাড়িতে
ভারি মজা
শ্বশুর ব্যাটার
মাথায় বোঝা 

*****************
ঘুম পাড়ানী মাসি পিসি
মোদের বাড়ি এসো,
খাট নাই পালঙ্ক নাই,
চোখ পেতে বসো।
বাটা ভরা পান দেবো
গাল ভরে খেও,
খোকার চোখে ঘুম নাই
ঘুম দিয়ে যেও।
খোকা ঘুমালো, পাড়া জুড়ালো
বর্গী এলো দেশে,
বুলবুলিতে ধান খেয়েছে
খাজনা দেব কিসে?
ধান ফুরালো, পান ফুরালো
খাজনার উপায় কি,
আর কটা দিন সবুর করো
রসুন বুনেছি।
*****************

*****************
আদুব বাদুড় চালতা বাদুড়
কলা বাদুরের বে
বাদুড় ঝুমকো নাড়া দে।
চামচিকেতে বাজনা বাজায়
খ্যাংরা কাঠি দে।
*****************
*****************
আয়রে আয় টিয়ে
নায়ে ভর দিয়ে
না’  নিয়ে গেল বোয়াল মাছে
তাই না দেখে ভোঁদড় নাচে।
ওরে ভোঁদড় ফিরে চা,
খোকার নাচন দেখে যা।
*****************

আতাই পাতাই দুইটি বুড়ো
দেখতে পেল পাহাড় চুড়ো
তরতরিয়ে উঠতে গিয়ে
পিছলে পড়ে হাড্ডি গুঁড়ো

*****************
তাতী বাড়ি ব্যাঙের বাসা
কোলা ব্যাঙের ছা,
খায় দায়, গান গায়,
তাইরে নাইরে না।
*****************

হাট্টি মা টিম টিম
তারা মাঠে পাড়ে ডিম
তাদের খাড়া দুটো শিং
তারা হাট্টি মা টিম টিম।



(যদি কারোর আরো কিছু ছড়া মনে থাকে তাহলে আমাকে ইমেল করে জানান এই এ্যাড্রেসে – chakrasudipta1973@gmail.com আমি এখানে যোগ করে দেব।)

মন্তব্যসমূহ

  1. এই রকম সংকলন নিয়ে আগে কেউ কাজ করেছে বলে আমি দেখিনি।।হয়ত করেছেন, কিন্তু চোখে পড়েনি।।অনেক অনেক ধন্যবাদ এই সংকলন উপহার দেবার জন্যে। এই লোকমুখে চলে আসা ছড়াগুলো হয়ত কিছুদিন পর মুখে মুখে আর চলবেনা। এমনিতেই শহুরে বাচ্চারা এসব থেকে আজকাল অনেক দূরে। আমাদের ছোটোবেলাটা অবশ্য এদের সঙ্গেই কেটেছে। সত্যি, দারুন লাগল।।মন ভাল হয়ে গেল।

    উত্তরমুছুন
  2. গুচ্ছ সব আবর্জনার নিচে চাপা পড়ে গেছিল এসব স্মৃতি। এই সংকলনটা আজ কিছুক্ষণের জন্যে সেই আবর্জনা সরিয়ে স্মৃতিগুলো ফিরিয়ে আনলো। ভাগ্যিস! নইলে হয়ত হারিয়েই যেত। আর, শুধু একপাতার এই অদ্ভুত ছড়াগুলো যে পুরো ছোটবেলাটা এক ঝটকায় ফিরিয়ে আনতে পারে, সেটা ভাবতেই পারিনি।

    আজকের বাড়ি থেকে অফিস যাবার শাটল জার্নিটা অন্যরকম হল - ধন্যবাদ।

    উত্তরমুছুন
  3. এই কাজটা একটা গুরুত্বপূর্ণ অথচ অনেকদিনের প্রচারের বাইরে। এই সংকলন হিরক। এই কাজের উদ্যোগ কে আমি ধন্যবাদ জানাই। আশা করি এই একটা পাতা সময়ের সাথে সাথে আর ও ভরে ঊঠবে এবং ছোটদের আনন্দ দেবার সাথে সাথে বড়দের ছোটবেলা ফিরিয়ে দেবে।

    উত্তরমুছুন
  4. দারুন !ছোটবেলা টা হঠাত্ ফিরিয়ে দিলি ! এখনই মেয়েকে পড়ে শোনাব 😂

    উত্তরমুছুন
  5. দারুন !ছোটবেলা টা হঠাত্ ফিরিয়ে দিলি ! এখনই মেয়েকে পড়ে শোনাব 😂

    উত্তরমুছুন
  6. Anek anek dhanyobad eta upahar debar janyo ... bhai

    উত্তরমুছুন
  7. খুব ভালো লাগলো । আমি আমার স্ত্রী দুজনাই মেয়েকে এই কবিতা ছড়া খুব শুনিয়েছি । আর আমি সবসময় উতসাহিত হই যখন দেখি কেউ বাংলা ভাষা নিয়ে কথা বলে। কিন্তু তারা মানে সেই বাচ্চারা এই সব শুনতে পায় না যাদের বাবা , মা নিজেদের বাংলিশ বা ইংবা হিসাবে পরিচয় দিয়েথাকে। - বিশ্বজিৎ

    উত্তরমুছুন
  8. একটা ছড়ার আরেকটু জানতাম—

    আইকম বাইকম
    তাড়াতাড়ি
    যদু মাষ্টার
    শ্বশুর বাড়ি
    শ্বশুর বাড়িতে
    ভারি মজা
    শ্বশুর ব্যাটার
    মাথায় বোঝা।
    রেল কম
    ঝমাঝম
    পা পিছলে
    আলুর দম।

    উত্তরমুছুন
  9. ভাগ্যিস টুকরো টুকরো সংগ্রহ করেছেন আপনি । তাইতো স্মৃতি উথলে উঠলো । ছোটদের জিভে-ঠোঁটে তুলে দেওয়ার খানিক রসদ সংগ্রহ করতে পারলাম । ছড়াগুলির লেখকের খোঁজ করছি । আশায় আছি, তাঁরাও হারিয়ে যাওয়ার আগে একবার উঠে আসবেন ।

    উত্তরমুছুন
  10. চাঁদ উঠেছে ফুল ফুটেছে
    কদম তলায় কে
    হাতি নাচছে ঘোড়া নাচছে
    সোনামনির বে।

    উত্তরমুছুন
  11. ইচিং বিচিং চিচিং ছা
    প্রজাপতি উড়ে যা

    উত্তরমুছুন
    উত্তরগুলি
    1. প্রজাপতির পাতা নেই তোমার সাথে কথা নেই 🙃

      মুছুন
  12. অমূল্য সংগ্রহ। মা এর সাথে কাটানো ছোট বেলার স্মৃতি ভেসে উঠলো।

    উত্তরমুছুন

একটি মন্তব্য পোস্ট করুন

এই ব্লগটি থেকে জনপ্রিয় পোস্টগুলি

আগমনী

দুঃখ বিলাস