দুঃখ বিলাস
আজ দিন দুয়েক হল একটা ইংরাজী শব্দের বাংলা অর্থ নিয়ে বেশ সমস্যায় পড়েছি। অভিধান ঘেঁটে অর্থ পেলেও বাংলা শব্দটা ঠিক মনঃপুত হল না। আসলে কি হয়েছে জানেন, কিছুদিন যাবৎ মনটা ভালো যাচ্ছে না। সবকিছুতেই একটা দুঃখ দুঃখ ভাব। তা সবার হিতপোদেশ কানে নিয়ে গেলাম এক মনের ডাক্তারের কাছে। অজস্র প্রশ্নবাণে জর্জরিত করে, আমার মস্তিষ্কের তেরটা বাজিয়ে উনি মুচকি হেসে প্রসন্ন বদনে ঘোষনা করলেন, এটা তেমন কিছু নয়। এসব এখন আকছার ঘটছে। আসলে আপনি ডিপ্রেশন-এ ভুগছেন।
নগদ কড়কড়ে চারশো টাকা গুনে দিয়ে ওনার কাছ থেকে পালিয়ে বাঁচলাম। রাস্তার ধারের দোকানে মাটির ভাঁড়ে চা খেয়ে মাথাটা বেশ হালকা লাগল। সাথে সাথে মনটা কেমন দুঃখ দুঃখ করে উঠল । ইস্ একেতো চারশো টাকা গেল তার উপর এই পাঁচ টাকার চা। আজকাল এই হয়েছে এক জালা, একটু মন খারাপ হলেই সবাই ফলাও করে বলবে, ডিপ্রেশনে ভুগছি। যেন মাথায় আভিজাত্যের টোপর উঠল।
বাড়ি ফিরতেই গিন্নীর জিজ্ঞাসা - কি বলল ডাক্তার? বললাম ডিপ্রেশন । গিন্নীর চোখ দুটো একবার কপালে উঠল তারপর ইতিউতি খুঁজে বেড়াতে লাগল নিজের মুঠোফোন। মুঠোফোন হাতের নাগালে পেতেই গিন্নী চলেগেল রান্নাঘরে খবর সম্প্রচারের জন্য। আমি অগত্যা বাংলা অভিধান নিয়ে বসলাম। খুঁজেপেতে যে বাংলা শব্দটা পেলাম তা ঠিক মনঃপুত হলনা।
আজ দুদিন হল আমার সংগ্রহের সব অভিধান ঘেঁটে ফেলেছি কিন্তু মনঃপুত শব্দ পেলাম না। অভিধান বলছে ডিপ্রেশনের অর্থ অবসাদ কিন্তু আমিতো অবসাদের কোন লক্ষন দেখছিনা। শুধু সবকিছুতেই আমার দুঃখ পায়।
এই যেমন ধরুন গিন্নী গরম চা দিয়ে গেল, চা মুখে দিতেই জিভটা গেল পুড়ে, মনে হল চাটা ঠান্ডা হলেই ভালো হত। ব্যাস অমনি আমার দুঃখ পেল। অথবা ধরুন গিন্নী অনেক্ষন চা দিয়েগেছে, চায়ের কাপে মুখ দিয়ে দেখলাম চা একদম ঠান্ডা, মনে হল চা গরম হলে ভাল হত বেশ আয়েস করে খেতাম, ব্যাস মনটা দুখী হয়ে পড়ল।
আসলে কারনে অকারনে মনে দুঃখ না এলে আমার দিনটা কেমন যেন পানসে হয়ে যায়।
এইতো সেদিন অফিস থেকে বাড়ি ফেরার সময় দেখি গোটা পাড়া অন্ধকার, লোডসেডিং। অন্ধকারে হোঁচট খেতেই মনেহল কেন যে লোডসেডিং হয় কে জানে। ব্যাস মন খারাপ হয়েগেল। বাড়িতে ঢুকেই দেখলাম লাইট, পাখা, টিভি সব ইনভাটারের দৌলতে বিন্দাস চলছে। মনেহল ইস্ ইনভাটার না থাকলে কত ভালো হত, এই আঁধারে মোমবাতির আলোয় গিন্নীর সাথে বসে কি সুন্দর চা খাওয়া যেত। অমনি আমার দুঃখ পেয়েগেল।
যেদিন সকাল থেকে দুঃখ পাওয়ার মত কিছু পাই না, সেদিন যেনতেন প্রকারে দুঃখ পাওয়ার জন্য মনটা ছটফট করে।
আজ রবিবারের বাজার, অফিসও নেই। অভিধান নিয়ে একটু জুতকরে বসেছিলাম। এই যে ডিপ্রেশনের একটা জুতসই অর্থ খুঁজে পাচ্ছিনা তাতেও আমার বেশ দুঃখ দুঃখ লাগছে।
হঠাৎ বাজারের থলে হাতে গিন্নীর আগমন। থলেটা আমার দিকে ছুঁড়ে দিয়ে বলে উঠল - বলি সকাল থেকে বিলাসিতা করলেই হবে ! পেটের জোগারটা অন্তত করে দিয়ে আমাকে উদ্ধার করো।
বিলাসিতা ! গিন্নীর মুখে এই শব্দটা শুনেই মনটা বেশ প্রফুল্ল হয়ে গেল। ডিপ্রেশনের বাংলা তো 'দুঃখ বিলাস' হতেই পারে। আবার মনটা দুঃখ পেয়েগেল। এই দুঃখ পাওয়ার দুটি কারন, প্রথমত আমি ভাষাবিদ নই যে দুম করে অভিধানে বাংলা শব্দ যোগ করব। আর দ্বিতীয় কারন হল এই শব্দটা গিন্নীর আগে আমার মাথায় কেন এল না।
এই যে সাতকাহন লেখার শেষে আবার কেমন যেন দুঃখ পেলাম। সবাই কি সুন্দর প্রেমের গপ্প, ভুতের গপ্প লিখছে আর আমি কিনা নিজের সংসারের গপ্প লিখছি ! ছিঃ, ছিঃ, ছিঃ ।
আরে আরে ও মশাই , ও দিদিভাই পুরো গপ্পটা না পড়েই পাতা উল্টাচ্ছেন কেন ! এবার খুব দুঃখ পেয়ে যাব কিন্তু .........
নগদ কড়কড়ে চারশো টাকা গুনে দিয়ে ওনার কাছ থেকে পালিয়ে বাঁচলাম। রাস্তার ধারের দোকানে মাটির ভাঁড়ে চা খেয়ে মাথাটা বেশ হালকা লাগল। সাথে সাথে মনটা কেমন দুঃখ দুঃখ করে উঠল । ইস্ একেতো চারশো টাকা গেল তার উপর এই পাঁচ টাকার চা। আজকাল এই হয়েছে এক জালা, একটু মন খারাপ হলেই সবাই ফলাও করে বলবে, ডিপ্রেশনে ভুগছি। যেন মাথায় আভিজাত্যের টোপর উঠল।
বাড়ি ফিরতেই গিন্নীর জিজ্ঞাসা - কি বলল ডাক্তার? বললাম ডিপ্রেশন । গিন্নীর চোখ দুটো একবার কপালে উঠল তারপর ইতিউতি খুঁজে বেড়াতে লাগল নিজের মুঠোফোন। মুঠোফোন হাতের নাগালে পেতেই গিন্নী চলেগেল রান্নাঘরে খবর সম্প্রচারের জন্য। আমি অগত্যা বাংলা অভিধান নিয়ে বসলাম। খুঁজেপেতে যে বাংলা শব্দটা পেলাম তা ঠিক মনঃপুত হলনা।
আজ দুদিন হল আমার সংগ্রহের সব অভিধান ঘেঁটে ফেলেছি কিন্তু মনঃপুত শব্দ পেলাম না। অভিধান বলছে ডিপ্রেশনের অর্থ অবসাদ কিন্তু আমিতো অবসাদের কোন লক্ষন দেখছিনা। শুধু সবকিছুতেই আমার দুঃখ পায়।
এই যেমন ধরুন গিন্নী গরম চা দিয়ে গেল, চা মুখে দিতেই জিভটা গেল পুড়ে, মনে হল চাটা ঠান্ডা হলেই ভালো হত। ব্যাস অমনি আমার দুঃখ পেল। অথবা ধরুন গিন্নী অনেক্ষন চা দিয়েগেছে, চায়ের কাপে মুখ দিয়ে দেখলাম চা একদম ঠান্ডা, মনে হল চা গরম হলে ভাল হত বেশ আয়েস করে খেতাম, ব্যাস মনটা দুখী হয়ে পড়ল।
আসলে কারনে অকারনে মনে দুঃখ না এলে আমার দিনটা কেমন যেন পানসে হয়ে যায়।
এইতো সেদিন অফিস থেকে বাড়ি ফেরার সময় দেখি গোটা পাড়া অন্ধকার, লোডসেডিং। অন্ধকারে হোঁচট খেতেই মনেহল কেন যে লোডসেডিং হয় কে জানে। ব্যাস মন খারাপ হয়েগেল। বাড়িতে ঢুকেই দেখলাম লাইট, পাখা, টিভি সব ইনভাটারের দৌলতে বিন্দাস চলছে। মনেহল ইস্ ইনভাটার না থাকলে কত ভালো হত, এই আঁধারে মোমবাতির আলোয় গিন্নীর সাথে বসে কি সুন্দর চা খাওয়া যেত। অমনি আমার দুঃখ পেয়েগেল।
যেদিন সকাল থেকে দুঃখ পাওয়ার মত কিছু পাই না, সেদিন যেনতেন প্রকারে দুঃখ পাওয়ার জন্য মনটা ছটফট করে।
আজ রবিবারের বাজার, অফিসও নেই। অভিধান নিয়ে একটু জুতকরে বসেছিলাম। এই যে ডিপ্রেশনের একটা জুতসই অর্থ খুঁজে পাচ্ছিনা তাতেও আমার বেশ দুঃখ দুঃখ লাগছে।
হঠাৎ বাজারের থলে হাতে গিন্নীর আগমন। থলেটা আমার দিকে ছুঁড়ে দিয়ে বলে উঠল - বলি সকাল থেকে বিলাসিতা করলেই হবে ! পেটের জোগারটা অন্তত করে দিয়ে আমাকে উদ্ধার করো।
বিলাসিতা ! গিন্নীর মুখে এই শব্দটা শুনেই মনটা বেশ প্রফুল্ল হয়ে গেল। ডিপ্রেশনের বাংলা তো 'দুঃখ বিলাস' হতেই পারে। আবার মনটা দুঃখ পেয়েগেল। এই দুঃখ পাওয়ার দুটি কারন, প্রথমত আমি ভাষাবিদ নই যে দুম করে অভিধানে বাংলা শব্দ যোগ করব। আর দ্বিতীয় কারন হল এই শব্দটা গিন্নীর আগে আমার মাথায় কেন এল না।
এই যে সাতকাহন লেখার শেষে আবার কেমন যেন দুঃখ পেলাম। সবাই কি সুন্দর প্রেমের গপ্প, ভুতের গপ্প লিখছে আর আমি কিনা নিজের সংসারের গপ্প লিখছি ! ছিঃ, ছিঃ, ছিঃ ।
আরে আরে ও মশাই , ও দিদিভাই পুরো গপ্পটা না পড়েই পাতা উল্টাচ্ছেন কেন ! এবার খুব দুঃখ পেয়ে যাব কিন্তু .........
বা:। একেবারে আধুনিক জীবনের রোজকার সমস্যাগুলোকে ছুঁয়ে যাওয়া লেখা। খুব বেশী করে লেখাটার সঙ্গে একাত্ম হতে পারছি। খুব ভাল লাগল। সত্যিই তো বড্ড ছোটো ছোটো জিনিসের দু:খ বিলাস করে চলি। কিন্তু জীবনের ছোটো খাটো আনন্দ গুলোকে অবহেলা করি। আর ঠিকই, কিছু হলেই ওই শব্দ - ডিপ্রেশন, অবসাদ। দারুন লেখা।
উত্তরমুছুনদারুণ বলেছেন দাদা
উত্তরমুছুনখুব ভালো লাগলো আপনার লিখা।
উত্তরমুছুন