তারার পানে চেয়ে
খাওয়া দাওয়ার পাট
অনেকক্ষন চুকে
গেছে । এখন রাত
বেশ গাঢ়
হয়েছে। মেয়েটা
বাড়ির ছাদে
এসে দাঁড়ালো। মাথার উপর
দিগন্ত বিস্তৃত
আকাশ, রাতের
অন্ধকারে ঝলমল
করছে । মেয়েটির চোখের
দৃষ্টি অগুন্তি
তারা দের
ভিড়ে হারিয়ে
যায়। ছোট্টবেলায়
মা বলত
যার পৃথিবী
থেকে চিরদিনের
মতো হারিয়ে
যায় তারা
সবাই ওই আকাশের তারা
হয়ে যায়
। মায়েরা
কখনও ভুল
বলেনা সেই
বিশ্বাসটুকু আছে
তাই সে তারাদের ভিড়ে
খুঁজে বেড়ায়
তার প্রিয়
তারাটিকে, তার
প্রিয় মানুষটিকে। চশমার নিচে
চোখ দুটি
একটু ঝাপসা
হয়ে আসে। যখন সে একদম
ছোট্টটি তখন
এই প্রিয়
মানুযটি আদর
করে ডাকতো
ফুলটুসি বলে। প্রত্যেক পুরুষের
কাছে নিজের
আত্মজা রাজকন্যার
থেকেও একটু
বেশী। এ ক্ষেত্রেও ব্যাতিক্রম
হয়নি। সব থেকে ছোট
মেয়ে তাই
আদর একটু
বেশীই ছিল। আর আদর
বেশী হলেই
অল্প বিস্তর
প্রচ্ছন্ন প্রশয়ও
থাকে বইকি। মেয়েটির দিদিরাও
আগলে রাখে
ছোট্ট বোনটিকে, একটা জ্যান্ত
খেলার পুতুল
পেয়েছে তারা
ভালোতো এমনিই
বাসবে , তাকে
নিয়ে খেলা
করা , সামান্য
শিশু সুলভ
শাসন তাও
ছিল। বাবা
বলতো ফুলটুসি, একটু বড় হবার পর ধীরে ধীরে
নামটা একটু
ছোট হয়ে
যায়, বাবা
কাজ থেকে
ফিরে ডাক
দিত টু...সি....ই , দৌড়ে আস্ত
টুসি ও জানে বাবা
ওর জন্য
ক্রিম বিস্কুট
এনেছে। বিস্কুট
টুসির বড় প্রিয় ছিল। এখন চারিদিকে
বিস্কুটের কত বিজ্ঞাপন কিন্তু
সেই ছোটবেলার
স্বাদ আর মেলেনা, হয়তো
বিস্কুটের সাথে
সেই টুসি
ডাকটা আজ নেই তাই। সেদিন টুসির শরীরটা
ঠিক ভালোছিল
না, রাত
বাড়তেই শরীর
আরো খারাপ
হল, বাবার
রাতে ডিউটি
ছিল কিন্তু
সেই প্রথম
মানুষটা ডিউটি
কামাই করল।ওই রাতে মেয়েকে
নিয়ে ডাক্তারের
কাছে যাওয়া। রোগটা কি সেটা বোঝা
না গেলেও
ডাক্তার বলল
এটা জ্বরের
পূর্ব লক্ষণ। অদ্ভুত মানুষ ! মুখ ফুটে
কিছু বলতে
পারত না কোনদিন, এদিনও
তাই শুধু
মনের ভিতরে
ছটফট করে
গেল সারা
রাত জেগে
রইল মেয়ের
কাছে, সকালে
মেয়ে চোখ
খুলে তাকাতে
তবে স্বস্তি।
সারা জীবন
মুখ বুজে
দায়িত্ব পালন
করে গেছে
শুধু নিজের
জন্য ভাবেনি
কোনদিন। অসুস্থ
বৃদ্ধ বাবা , বাল্য বিধবা
বৃদ্ধা পিসি, অবিবাহিত দুইবোন , পাঁচ মেয়ে
সবার সব প্রয়োজন মুখ
বুজে মিটিয়ে
গেছে মানুষটা। পাশে শুধু
যোগ্য সহধর্মিনী, প্রতিটি কাজের
অকথিত সমর্থক।
পুজো এলেই নতুন
জামা .... বাবা
আমার কিন্তু
দিদিদের থেকে
বেশী চাই , বাবা মুচকি
হাসে। দিদিরা
বাবাকে একটু
সমীহ করে
চলত কিন্তু
টুসির ওসব
বালাই নেই , বাবাকে আবার
ভয় কিসের ! বাবাতো বাবা-ই , বাঘ
ভাল্লুক নাকি
অতএব আদরের
অত্যাচার। হাসি
মুখে মেনে
নিত মানুষটা। ইচ্ছার থেকে
সামর্থ কম তাই রাত
জেগে নিজে
হাতে মেয়েদের
পুজোর জামা
সেলাই করতো
আর টুসির
জন্য একটা
বেশী। রাতের তারা ভরা
আকাশের নিচে
দাঁড়িয়ে মেয়েটা
ভাবে কি বোকাই না ছিলাম ছোটবেলায়, কোন ভালো
খাবার হলে
বা চকলেট
হাতে নিলেই
দিদিরা এসে
বলত
- বোন একটু
দেনা রে।
- কেন দেবো ? তোদের নেই ?
- একটু দে।
টুসি তখনকার
মতো ভাগ
দিত কিন্তু
পরক্ষণেই যদি
দিদিদের সাথে
ঝগড়া হত তখন বলত - তোরা আমার
কাছ থেকে
চেয়ে কেন
খেয়েছিস ? এখনই
ফেরত দে ।
ঝাপসা চোখে
হেসে ফেলে
মেয়েটি।
সেই ছোট্টবেলার খেলনাবাটি
সেই পুতুলের
বিয়ে সেই
দস্যিপনা সবকিছু
ছেড়ে ধীরে
ধীর দিদিরা
সত্যি কারের
পুতুল খেলতে
চলে যায়। টুসির একটু
মন খারাপ
হয়, কিন্তু
যখন বাবা
টুসি বলে
ডেকে ওঠে
মনটা আবার
ভালো হয়ে
যায়।
সেদিন সকাল থেকে
সবাই খুব
ব্যাস্ত , বাবার
ব্যাস্ততা একটু
বেশী আর হবে নাই
বা কেন
আজ যে টুসির বিয়ে। হঠাৎ বাবা
ব্যাস্ত হয়ে
ঘরে ঢোকে, টুসি বলে - কিছু বলবে ? বাবা বলে
না না কিছু না , নে নে তাড়াতাড়ি নে। টুসি ভেবে
পায় না কি তাড়াতাড়ি
নিতে বলল
বাবা ! তারপর
বুঝল আসলে
মেয়েকে আজ আর চোখের
আড়াল করতে
চাইছে না।তাই বারবার
তাড়া দেওয়ার
বাহানায় একবার
দেখে যাচ্ছে। আসলে বাবারা
বোধহয় এরকমই
হয়।
ফুলসজ্জার রাতে
মেয়েটিকে ছেলেটি
বলল তুমি
আমার বন্ধু
হবে ? মেয়েটি
ভাবল এ আবার কোন
পাগল ! স্বামী
স্ত্রী বন্ধু
হয় নাকি ! কে জানে
হয়তো বা হয় !
বিয়ের পর টুসি ব্যাস্ত
হয় পড়ে
সংসার খেলায়। মাঝে মধ্যে
যে ফোন
করে বাবা-মার খবর
নেয় না তা নয়, তবে মাঝে
মধ্যে সময়ের
অভাবে খবর
নেওয়া হত না। বাবা
তখন ফোন
করে বলত - টুসি তোর
মা বলছিল
তুই অনেকদিন
ফোন করিস
নি ? তা কেমন আছিস ?
টুসি অবাক
হয়ে যায়, কখনও কি বাবা মনের
কথা বলতে
পারে যে- টুসি তোর
জন্য মন খারাপ করছে ! না কি সব বাবারা
এরকমই হয় !
এরপর কেটে যায়
বেশ কয়েক
বছর। টুসির
কোলেও ছোট্ট
টুসি আসে। জীবন বয়ে
চলে ।
সেদিন ছিল
বুধবার সকাল
থেকেই টুসির
মনটা বড়
অস্থির হয়ে
পড়েছিল। ভেবেছিল
হাতের কাজ
একটু সামলে
নিয়ে ফোন
করবে মা-বাবাকে । দশটার সময়
খবরটা পেয়ে
তাড়াতাড়ি হাসপাতালে
এসে পৌঁছায়। কেন এমন
হলো কে জানে ? ঘরের
মধ্যেই বসে
থাকতে থাকতে
পড়ে যায়
বাবা। বাবার কাছে গিয়ে
বলে বাবা
চিন্তে পারছ ? জড়ানো গলায়
আওয়াজ আসে
টু...সি...ই ।
না এরপর
আর কোনদিন
টুসি ডাক
শোনেনি মেয়েটি। হাসপাতালের বিছানার
পাশে বসে
বাবার হাত
ধরে ডাকতো
মেয়েটি - বাবা
ও বাবা , শুধু শীর্ণ
হাত দিয়ে
মেয়ের হাত
চেপে ধরতে
চাইতো। এভাবেই
কেটে গেল
কয়েক দিন
। সেদিনটা
ছিল মঙ্গলবার
চিরদিনের জন্য
চুপকরে গেল
মানুষটা। সারাজীবনের
ক্লান্তি নিয়ে
চলেগেল চিরঘুমের
দেশে। সেদিন আকাশ জুড়ে দুর্যোগ, চারিদিক ঘোর
অন্ধকার।
ছাদের উপর খোলা
আকাশের নিচে
দাঁড়িয়ে মেয়েটি
সাথে সেই
ছেলেটি যে বলেছিল বন্ধু
হবে ।
কি আশ্চর্য্য
আজও সেই ঘোর অন্ধকার, আজও
১৩ই সেপ্টেম্বর, আজও ২৬শে
ভাদ্র। মা বলে সবাই
আকাশের তারা
হয়ে যায়। নিশ্চই যায় ঐতো ঐ তারাটা কেমন
জ্বলজ্বল করছে। দু-চোখে
জলের ধারা
নেমে আসে , অস্ফুটে বলে
ওঠে - বাবা।
বা: লেখার মধ্যে দরদ রয়েছে অনেকখানি। বাবা মেয়ের গল্প। ভাল লাগল পড়ে
উত্তরমুছুনবা: লেখার মধ্যে দরদ রয়েছে অনেকখানি। বাবা মেয়ের গল্প। ভাল লাগল পড়ে
উত্তরমুছুনজীবনের টুকরো টুকরো স্মৃতি জুড়েই তো গল্প ..... গল্প হলেও তো সত্যি .... জীবনের গল্পটা পড়ার জন্য ধন্যবাদ
উত্তরমুছুনচোখের জলে ধুয়ে গেল ব্লগের পাতা।
উত্তরমুছুনগল্প বোধ হয় এভাবেই পায় সজীবতা।