তুমি না থাকলে

মা দূর্গার আরাধনায় উৎসবে মেতেছে গোটা বঙ্গ তথা সারা দেশ। এই আরাধনার মূল উদ্যক্তা ছিলেন স্বয়ং শ্রী রামচন্দ্র। সে কাহিনী আমরা রামায়ণে পড়েছি। কিন্তু একজন না থাকলে কোন মতেই আমরা এই মহিষমর্দিনী রূপের আরাধনায় মেতে উঠতে পারতাম না। ভাবছেন তিনি আবার কে ! গল্প উপন্যাসে যেমন নায়কের ভাবমূর্তি উজ্জ্বল করতে খলনায়কের অবতারনা করা হয় তেমনি অশুভ শক্তির উদয় না হলে শুভ শক্তির আবির্ভাব হয় না। ©Sudipta যদি মহিষাসুর না থাকত তাহলে মহিষমর্দিনী রূপ আমরা দেখতে পেতাম না আর আমাদেরও উৎসবে মেতে ওঠা হত না। শুধু কি মহিষাসুরের মধ্যেই অশুভ শক্তির বসবাস ! পূরাণ কিন্তু অন্য কথা বলে। অশুভ শক্তির বিনাশে অংশগ্রহনকারীদের মধ্যে মহিষাসুর একজন কলাকুশলী মাত্র। আর শুভ শক্তির মধ্যেই যদি অশুভ শক্তির উদয় হয় তাহলে সেই অশুভ শক্তির বিনাশের জন্য একটু ছলনার আশ্রয় তো নিতেই হয় মানে এযুগের ভাষায় "গট আপ গেম"। না না কেউ ধর্মের দোহাই দিয়ে রে রে করে তেড়ে আসার আগে একটু কালিকা পূরানে চোখ বুলিয়ে নেওয়া যাক। যে কোন পূরাণেই সৃষ্টির আদিতে মহামায়াকেই জগৎ নিয়ন্ত্রক হিসাবে বর্ণনা করা হয়েছে। কালিকাপূরাণেও এর অন্যথা হয়নি। অসুর রাজ রম্ভা আর শাপগ্রস্থ রাজকুমারি মহিষরূপী শ্যামলার গর্ভে জন্ম মহিষাসুরের। মহিষাসুর ছিলেন দেবী দূর্গার একনিষ্ঠ ভক্ত। সৃষ্টির আদিতে মহামায়া দূর্গা সারা জগৎ নিয়ন্ত্রণ করতেন। ©Sudipta মহামায়ার আনুকুল্যে দেবতারা বিশেষ ক্ষমতার অধিকারী হয়ে ওঠেন। ধীরে ধীরে ক্ষমতার বলে বলিয়ান হয়ে বিপথে চলে যান দেবতারা। মহামায়ার প্রভাব খর্ব হতে থাকে। মহামায়া নিজের চোখের সামনে এই অনাচার দেখে স্থির থাকতে পারেন না। দেবতাদের উচিত শিক্ষা দিতে তার একনিষ্ঠ ভক্ত মহিষাসুরকে বেছেনেন। দেবী মহিষাসুরকে বলেন যদি মহিষাসুর দেবীকে সাহায্য করেন তাহলে মহিষাসুর হাজার বছরের তপস্যার ফল লাভ করবে আর দেবীর সাথে সাথে মর্তলোকে পূজিত হবে। মহিষাসুর এই প্রস্তাবে রাজি হন। এদিকে দেবতাদের সাথে অসুর রাজ রম্ভার যুদ্ধে রম্ভা নিহত হন। ফল স্বরূপ পিতৃ হত্যার প্রতিশোধ নিতে দেবীর নির্দেশে মহিষাসুর দেবতাদের বিরুদ্ধে যুদ্ধে অবতির্ণ হন। দেবীর কৃপা ও প্রজাপতি ব্রহ্মার আশির্বাদে বলিয়ান হয়ে মহিষাসুর দেবতাদের পরাজিত করে স্বর্গ থেকে বিতারিত করেন। এই ভাবে কয়েকশো বছর স্বর্গ থেকে বিতারিত থাকার পর দেবতারা মহামায়ার শরণাপন্ন হলেন। দেবী তাদের স্বর্গ ফিরিয়ে দেওয়ার প্রতিশ্রুতি দিলেন। এরপর পূর্বপরিকল্পনা অনুযায়ী দেবীর হাতে মহিষাসুর নিধন ও দেবীর মহিষমর্দিনী রূপ ধারণ। দেবীর দেওয়া প্রতিশ্রুতি মতো আজও দেবীর সাথে মহিষাসুর পূজো পেয়ে আসছে।©Sudipta তাই মহিষাসুর খলনায়ক বা অশুভ শক্তি নয় , অশুভ শক্তি বিনাশে দেবী দূর্গার সাহায্যকারী মাত্র। তবে আমাদের অন্যানয পূরাণ বা লোকগাথায় আরও কাহিনী পাওয়া যায় । তবে একথা কেউ অস্বীকার করতে পারবেনা যে মহিষাসুর না থাকলে আমরা দেবীর মহিষমর্দিনী রূপ পেতাম না আর এই শারদৎসবে মেতে উঠতেও পারতাম না।
©Sudipta

মন্তব্যসমূহ

এই ব্লগটি থেকে জনপ্রিয় পোস্টগুলি

ছোট্টবেলার ছড়া

আগমনী

দুঃখ বিলাস