২৫শে আলাপ

যদি তারে নাই চিনি গো সে কি ......
সৈকত গুনগুন করতে করতে একটা কাগজে কিছু লিখছিল। হঠাৎ  অঙ্কিতা কাগজটা হাতে নিয়ে দলা পাকিয়ে ঘরের এক কোনে ছুঁড়ে ফেলে দিল। সৈকত বুঝল প্রবল ঝড়ের আগমন বার্তা। ঝড়ের প্রকোপ কমানোর জন্য সৈকত বলল -
-  ছলছল চোখ , রক্তরাঙা মুখ, প্রিয়ে  কি বা হেতু তোমার এ রূপ।
- ন্যাকামি হচ্ছে !
- না মানে
- আজ তোমার জন্য সবার কাছে আমার মাথা হেঁট হয়েগেছে।
- আমার জন্য ! আমি আবার কি করলাম !  আমি তো তোমাদের রবীন্দ্র জয়ন্তী উৎসবে যাই নি।  তাহলে ?
- সেই জন্যেইতো দিপালী সবার সামনে ও ভাবে অপমান করল।
- কি রকম কি রকম !
- তোমার মজা লাগছে ! তা তো লাগবেই।  আমাকে সবার সামনে ছোট হতে দেখলে তোমার শরীরের জ্বালা জুড়োয় তাই না ?
- আহা ওই দেখ কি কথার কি মানে করে বসে। কি বলেছে সেটাতো বলবে।
- আমাকে দেখে বলল, কি রে সৈকত আসে নি। আমি বললাম না। তা ও কি বলে জানো!  বলে সেকিরে এদিক ওদিক দুপাতা গল্প লিখেই নিজেকে রবি ঠাকুর ভাবছে নাকি ! ভাগ্যিস মধুরিমা এসে পরেছিল তাই রক্ষে না হলে আর কি কি যে শুনতে হত কে জানে।  এই সব তোমার জন্যে।
- আসলে কি জানো গিন্নী এই বাংলায় জন্মেও রবি ঠাকুরের মতো কেউ হতে পারলাম না এটাই সবচেয়ে বড় লজ্জার।
- এই দেখ এসব গিন্নী টিন্নী বলবে না। আমার একদম ভালো লাগে না।
- আচ্ছা বাবা ঠিক আছে ঠিক আছে। তা তোমাদের জলসায় আজ কি কি হলো ?
- ওই যা হয় , গান আবৃত্তি নৃত্য।
- সব রবি ঠাকুরেরই তো !
- এ আবার কি কথা ? রবীন্দ্র জয়ন্তীতে রবি ঠাকুরের গান আবৃত্তি ছাড়া আর কি হবে। তবে হ্যাঁ কয়েক জন নিজের লেখা গল্প পাঠ করল। কি সুন্দর লিখেছে জানো ! ভালোবাসার গল্পের সাথে কি সুন্দর ভাবে রবীন্দ্র জয়ন্তীকে মিশিয়ে দিয়েছে।
- যাক তবু ধুলায় মেশায় নি এই ঢেড়।
- মানে ?
-  গঙ্গা জলে গঙ্গা পূজো
   গঙ্গা মাটি নিয়ে,
   কবি রবির পূজো করি
   তারই সৃষ্টি দিয়ে।
   সবকিছুই মেনে নিয়েও
   অবাক তবু হই,
   কবি রবি আছে
   কিন্তু মানুষ রবি কই!
- কি পাগলের মতো আওড়াচ্ছ।
- পাগলের মতো কি গো গিন্নী পুরো পাগল।
- আবার !
- আচ্ছা আচ্ছা,  কি জানো অঙ্কু কবি রবির গান আবৃত্তিতেই সবাই মগ্ন। কিন্তু এই লেখালেখির বাইরেও তো তাঁর আরো সৃষ্টি আছে। তা নিয়ে কেউ কি কিছু ভাবে!
- দেখ আমায় ওমন বিকৃত নামে ডাকবে না।
- বেশ তা না হয় নাই ডাকলাম কিন্তু তুমি কখনও ভেবেছ ?
- কি ভাবব !
- কখনও দেখেছ রবীন্দ্র জয়ন্তীতে কেউ একসাথে বসে ছবি আঁকছে বা অন্য কোন শিল্প কর্ম করছে ? দেখনি। দেখতে পাবে না। তার লেখনীকেই সবাই মনে রেখেছে। কিন্তু তার লেখনীর বাইরে মানুষ রবির ভাবনা আদর্শ কেউ মনে রাখেনি। চেনা ছকের বাইরে আমরা বেড়তে ভয় পাই তাই শান্তিনিকেতনের বিশ্বভারতীর মতো আর কোন প্রতিষ্ঠান আজও আমরা গড়ে তুলিনি। না চৌত্রিশে না ছয়ে।
- কিন্তু সবাইতো তাই করে।
- বছরে একটা দিন দশজন জড়ো হয়ে গান করলাম আবৃত্তি করলাম । তাতে তাঁর কতটুকু সম্মান বৃদ্ধি হল কে জানে। তার ভাবনাকে যদি বাস্তবায়িত করতে পারা যায় তবে সেটাই হবে সবচেয়ে বড় শ্রদ্ধাঞ্জলী।
- বুঝলাম।
- কি বুঝলে ?
- তোমার এবার একটু গরম চায়ের দরকার।
- শুধু চা !
- ডালের বড়া চলবে ?
- আমার একার জন্য ?
- উঁহু,  আমাদের দুজনের। 

মন্তব্যসমূহ

একটি মন্তব্য পোস্ট করুন

এই ব্লগটি থেকে জনপ্রিয় পোস্টগুলি

ছোট্টবেলার ছড়া

আগমনী

দুঃখ বিলাস