দাদু দিদিমা সংবাদ
কই গো গিন্নী কোথায় গেলে ? পাশের বাড়ীর দাদু বাজার থেকে এসে ডাক দিলেন তার অতি আদরের গিন্নীকে। গিন্নী মানে আমাদের দিদিমা তখন মুখ ঝামটা দিয়ে বলে উঠলেন - সাত সকালে আর আদিখ্যেতা দেখাতে হবে না , যাব আর কোন চুলোয় ! যাবার তো একটাই জায়গা যমের বাড়ী , তা সেখানে যাওয়ার ঢের দেরী আছে। বেচারা দাদু ! সকালবেলা একটু মিষ্টি কথা বলার চেষ্টা করলেন তো দিদিমা এসে তেতো কথার উচ্ছে কানের মধ্যে গুঁজে দিলেন । দাদু হতাশ হয়ে বাজারের থলিটা রেখে বসে পরলেন । বাজার থেকে ফেরার পথে কত অলীক কল্পনাই না করলেন, বাড়ী গিয়ে গিন্নীর হাতের গরম গরম চা খাবেন , গিন্নীর গোটা পাঁচেক দাঁতের মিষ্টি হাসি দেখবেন কিন্তু না সক্কাল সক্কাল গিন্নীর কথার ঝাঁজে সতেজ মনটাতেই ছ্যাঁকা লেগেগেল। মনে মনে ভাবলেন মুখ তো নয় যেন বোম্বাই লঙ্কা।
দাদুর তেল চকচকে টাকে এই শীতেও বিন্দু বিন্দু ঘাম জমেছে। ভেবেছিলেন গিন্নী শান্তিপুরি শাড়ী আঁচল দিয়ে মুছিয়ে দেবে কিন্তু হায় শেষে টাকের উপর ফুটপাতের গামছাই চড়ে বসলো।
ওদিকে দিদিমা রান্নঘরে থলির ভিতর থেকে একটা একটা করে জিনিস বার করছেন আর ডাক ছাড়ছেন ।
হতছাড়া মিনসে, যত বয়স বাড়ছে তত ভিমরতি ধরছে।
ওদিকে সেই ডাক শুনে দাদু এসে হাজির রণক্ষেত্রে - বলি হলোটা কি ? এত চিত্কার করছো কেন অ্যাঁ ? ভোর তো অনেকক্ষণ হয়েগেছে এখনও দাঁড়কাকের মত চ্যাঁচাচ্ছ কেন ?
দিদিমা - নাঃ, চ্যাঁচাবো না ! শ্যামের বাঁশি বাজাব ! এই কি আলুর ছিড়ি এর থেকে কাঁঠালে বীজও বড় হয় তা জানো ?
দাদু - হতে পারে কিন্তু তোমার ওই কাঁঠালের বীজ এই আলুর মতো এত মূল্যবান নয়।
দিদিমা - আর এই কি মাছ ! এ তো সমাধি প্রাপ্ত হয়েছে ।
দাদু সবে মাত্র স্নান করে বেড়িয়েছেন , কানে গেল গিন্নীর মধুর বানী , কই গো গেলে কোথায় ! কখন থেকে ভাত বেড়ে বসে আছি, এবার এই পিণ্ডি গিলে আমায় উদ্ধার কর ।
দাদু তাড়াতাড়ি কাপড়টা কোমরে জড়িয়ে খাবার ঘরের দিকে এগিয়ে গেলেন।
স্টীলের থালা থেকে গরম ধোঁয়া উঠছে । দাদু নিজের মনেই বললেন, মনে হয় গিন্নী ভাত বসিয়ে গড়াগড়ি খাচ্ছিল তাই ভাতও থালায় পায়েসের মতো গড়াচ্ছে। তা হোক এই বুড়ো বয়সে দাঁতের শত্রুতায় তাড়াতাড়ি গলধকরণ করা যাবে।
দাদু তাড়াতাড়ি গিয়ে প্রজাপতি আঁকা আসনে বসে পড়লেন। যদিও প্রজাপতি বন্ধন বহুদিন আগেই হয়েগেছে আর তার জন্য এখন আপসোস করছেন।
ভাতের উপর ছড়ছড় করে খানিকটা ডাল এসে পড়ল। থালার এক পাশে হুনুমান রূপধারী ছোট ছোট বড়ি ভাজা। তার পাশে এসে পড়ল উজ্জ্বল শ্যাম বর্ণের মাছের কাঁটা সমৃদ্ধ খানিকটা ঘ্যাঁট। যেন দাদু সার্বজনীন দূর্গাপূজার কাঙালী ভোজনে বসেছেন।
দাদু দিদিমার দিকে তাকিয়ে দন্তবিহীন মিষ্টি হাসি হেসে বললেন, তা হ্যাঁ গো মাছ দিয়ে কি করলে ? ঝোল না ঝাল ?
দিদিমার মুখ থেকে ঝালের ফুলঝুরি ছুটে এল , হুঁউঃ ঝোল না ঝাল, যা মাছের ছিরি তা দিয়ে কত্তা আমার কালিয়া খাবেন! ঝাল ঝোল কিছুহয়নি যা দেওয়ার ওই ঘ্যাঁটের মধ্যে ঘ্যেঁটে দিয়েছি।
ঘ্যাঁটের মধ্যে মাছের দুঃখজনক পরিণতি দেখে দাদুর মনেও দুঃখের সঞ্চার হল, কারণ তিনিও তো সংসার রূপী ঘ্যাঁটের মধ্যে পড়ে দিদিমা রূপী খুন্তির দ্বারা নিত্য ঘ্যাঁটিত হচ্ছেন।
(পুনঃশ্চ - গল্পের ঝগড়া এখানেই শেষ হলে ভালো হতো কিন্তু এই ঝগড়া শেষ হয়েগেলে বা ওনাদের জীবন থেকে হারিয়ে গেলে ওনাদের পরস্পরের প্রতি ভালোবাসাও হারিয়ে যাবে যে তাই ............ )
দাদুর তেল চকচকে টাকে এই শীতেও বিন্দু বিন্দু ঘাম জমেছে। ভেবেছিলেন গিন্নী শান্তিপুরি শাড়ী আঁচল দিয়ে মুছিয়ে দেবে কিন্তু হায় শেষে টাকের উপর ফুটপাতের গামছাই চড়ে বসলো।
ওদিকে দিদিমা রান্নঘরে থলির ভিতর থেকে একটা একটা করে জিনিস বার করছেন আর ডাক ছাড়ছেন ।
হতছাড়া মিনসে, যত বয়স বাড়ছে তত ভিমরতি ধরছে।
ওদিকে সেই ডাক শুনে দাদু এসে হাজির রণক্ষেত্রে - বলি হলোটা কি ? এত চিত্কার করছো কেন অ্যাঁ ? ভোর তো অনেকক্ষণ হয়েগেছে এখনও দাঁড়কাকের মত চ্যাঁচাচ্ছ কেন ?
দিদিমা - নাঃ, চ্যাঁচাবো না ! শ্যামের বাঁশি বাজাব ! এই কি আলুর ছিড়ি এর থেকে কাঁঠালে বীজও বড় হয় তা জানো ?
দাদু - হতে পারে কিন্তু তোমার ওই কাঁঠালের বীজ এই আলুর মতো এত মূল্যবান নয়।
দিদিমা - আর এই কি মাছ ! এ তো সমাধি প্রাপ্ত হয়েছে ।
দাদু - তা আর কি করব বল আমার তো আর পুকুর নেই যে টাটকা মাছ খাওয়াবো । তা এই পচা মাছ খেয়েই গতরটা যা বানিয়েছ .................
দিদিমা - দেখ সাত সকাল্ খোঁটা দেবে না ।তোমার চাকরীর পয়সায় খেয়ে হয় নি , আমার বাবাও আমাকে কম খাওয়ায়নি ।
দাদু - আহাঃ গিন্নী চটছো কেন ! তুমি তো আর আমার চাকরীর পয়সায় খাচ্ছো না , আমার পেনশানের টাকায় গিলছো।
এরপর কিছুক্ষনের বিরতি ........ দাদু সবে মাত্র স্নান করে বেড়িয়েছেন , কানে গেল গিন্নীর মধুর বানী , কই গো গেলে কোথায় ! কখন থেকে ভাত বেড়ে বসে আছি, এবার এই পিণ্ডি গিলে আমায় উদ্ধার কর ।
দাদু তাড়াতাড়ি কাপড়টা কোমরে জড়িয়ে খাবার ঘরের দিকে এগিয়ে গেলেন।
স্টীলের থালা থেকে গরম ধোঁয়া উঠছে । দাদু নিজের মনেই বললেন, মনে হয় গিন্নী ভাত বসিয়ে গড়াগড়ি খাচ্ছিল তাই ভাতও থালায় পায়েসের মতো গড়াচ্ছে। তা হোক এই বুড়ো বয়সে দাঁতের শত্রুতায় তাড়াতাড়ি গলধকরণ করা যাবে।
দাদু তাড়াতাড়ি গিয়ে প্রজাপতি আঁকা আসনে বসে পড়লেন। যদিও প্রজাপতি বন্ধন বহুদিন আগেই হয়েগেছে আর তার জন্য এখন আপসোস করছেন।
ভাতের উপর ছড়ছড় করে খানিকটা ডাল এসে পড়ল। থালার এক পাশে হুনুমান রূপধারী ছোট ছোট বড়ি ভাজা। তার পাশে এসে পড়ল উজ্জ্বল শ্যাম বর্ণের মাছের কাঁটা সমৃদ্ধ খানিকটা ঘ্যাঁট। যেন দাদু সার্বজনীন দূর্গাপূজার কাঙালী ভোজনে বসেছেন।
দাদু দিদিমার দিকে তাকিয়ে দন্তবিহীন মিষ্টি হাসি হেসে বললেন, তা হ্যাঁ গো মাছ দিয়ে কি করলে ? ঝোল না ঝাল ?
দিদিমার মুখ থেকে ঝালের ফুলঝুরি ছুটে এল , হুঁউঃ ঝোল না ঝাল, যা মাছের ছিরি তা দিয়ে কত্তা আমার কালিয়া খাবেন! ঝাল ঝোল কিছুহয়নি যা দেওয়ার ওই ঘ্যাঁটের মধ্যে ঘ্যেঁটে দিয়েছি।
ঘ্যাঁটের মধ্যে মাছের দুঃখজনক পরিণতি দেখে দাদুর মনেও দুঃখের সঞ্চার হল, কারণ তিনিও তো সংসার রূপী ঘ্যাঁটের মধ্যে পড়ে দিদিমা রূপী খুন্তির দ্বারা নিত্য ঘ্যাঁটিত হচ্ছেন।
(পুনঃশ্চ - গল্পের ঝগড়া এখানেই শেষ হলে ভালো হতো কিন্তু এই ঝগড়া শেষ হয়েগেলে বা ওনাদের জীবন থেকে হারিয়ে গেলে ওনাদের পরস্পরের প্রতি ভালোবাসাও হারিয়ে যাবে যে তাই ............ )
ভাবছিলাম লেখার শেষটা ঠিক কেমন। দুর্দান্ত। শেষ নেই। বঙ্গ জীবনের অঙ্গ। খুব ভালো হয়েছে।
উত্তরমুছুনএটা আজ থেকে প্রায় 25 বছর আগে লেখা আমার পুরানো ডায়রীতে খুঁজে পেলাম ...... চোখ কান বুঁজে পোষ্ট করে দিলাম
উত্তরমুছুন